বর্তমানে লেজার পয়েন্টার দেখেননি এমন মানুষ খুব কম আছে। লিজার টেকনোলজি খুবই নিখুঁত কাজ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। একটু অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে হয় লেজার টেকনোলজির মাধ্যমে বিভিন্ন পরিমাপ সংক্রান্ত কাজকর্ম খুব নিখুঁতভাবে করা সম্ভব। ঠিক এই কারনে বর্তমানে লেজার টেকনোলজির ব্যবহার অনেকটাই বেড়েছে।
আপনি যখন কোনো সুপার মার্কেটে প্রবেশ করতে যান তখন সেখানে থাকা নিরাপত্তারক্ষী আপনার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার জন্য যে যন্ত্রটি ব্যবহার করেন তার মধ্যে লেজার টেকনোলজির ব্যবহার হয়।
আবার সুপার মার্কেট থেকে কেনাকাটা করে বেরিয়ে আসার সময় , সুপারমার্কেটের ক্যাশিয়াররা যখন আপনার নেওয়া জিনিসের অপরে থাকা বারকোড স্ক্যান করার জন্য যে বারকোড স্ক্যানার টি ব্যাবহার করেন তার মধ্যে এই লেজার টেকনোলজির ব্যবহার করা হয়।
লিজার টেকনোলজি বা লেজার লাইটের ব্যবহার যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে যেটা লক্ষ্য করা যাবে তা হল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লেজার পয়েন্টার বা লেজার লাইটের রং লাল হয়ে থাকে ।
সহজভাবে বলতে গেলে লেজার পয়েন্টার বা লেজার লাইটের রং লাল হওয়ার পিছনে প্রধান কারণ গুলি হলো লাল রংয়ের লেজার লাইট তৈরি করতে খরচাও অনেক কম হয় এবং অন্য কোন রঙের দ্বারা লাল রং এর আলো প্রভাবিত হয় না।
এই পোস্ট এ আমরা জানবো অন্য কোনো রঙের লেজারের চেয়ে লাল লেজার পয়েন্টার তৈরি করতে খরচ কম হয় কেন? এটি বোঝার জন্য, আমাদের বুঝতে হবে লেজার পয়েন্টারগুলি আসলে কী এবং তারা কীভাবে কাজ করে ।
লেজার কি?
LASER এর ফুল ফর্ম হল Light Amplification by Stimulated Emission of Radiation (LASER)। লেজার লাইট আসলে খুব ছোট ক্ষেত্রের ওপর ফোকাস করা একটি অতি উজ্জ্বল আলোর উৎস
আসুন এখন বুঝে নেই লেজারের আলো কিভাবে উৎপন্ন হয়? লেজারের আলো নির্গমনের জন্য প্রথমে একটি পদার্থের প্রয়োজন হয় যা কঠিন (glass, crystal, diamond) বা গ্যাস (হিলিয়াম, নিয়ন ইত্যাদি) হতে পারে। এই পদার্থের পরমাণুতে উপস্থিত ইলেকট্রনগুলিকে বাইরে থেকে বৈদ্যুতিক শক্তি প্রয়োগ করে উত্তেজিত করা হয় এবং এর শক্তিযুক্ত ইলেকট্রন পরমাণুর মধ্যে নিম্ন অরবিটাল থেকে উচ্চতর অরবিটালে লাফ দেয়।
এরপর উত্তেজিত পরমাণু গুলি যখন নিজের জায়গায় ফিরে যায় তখন এর মধ্যে সঞ্ছিত থাকা শক্তি ফোটন বা আলোর আকারে নির্গত হয়। এভাবে নির্গত প্রতিটি পরমাণু আসা আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এবং রং সমান।
আরও জানুন :- অপটিক্যাল ফাইবার কি?
সাধারণ আলো এবং লেজারের মধ্যে পার্থক্য
আলো তরঙ্গের আকারে প্রবাহিত হয় এবং প্রতিটি তরঙ্গের একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য থাকে। সূর্য থেকে আসা বা আমাদের বাড়িতে ব্যবহৃত আলো সাদা দেখায় কারন এটি সাতটি ভিন্ন রঙের আলোর মিশ্রণ। প্রতিটি রঙের নিজস্ব তরঙ্গদৈর্ঘ্য রয়েছে এবং বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে ভিন্নমাত্রায় শক্তি রয়েছে। এই কারণে সাদা আলো বিভিন্ন রঙে বিক্ষিপ্ত হয়।

কিন্তু লেজার পয়েন্টার থেকে আসা আলোর একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য বৈশিষ্ট্য রশ্মি দিয়ে তৈরি। এই আলো একরঙা এবং উত্স থেকে নির্গত সমস্ত রশ্মি একই পর্যায়ে থাকে, তাই এটি আলোর উত্স থেকে নির্গত হওয়ার পর একটি সরল রেখায় চলে এবং শুধুমাত্র একটি বিন্দুতে ফোকাস করে। এই কারণে এটি দীর্ঘ দূরত্বে পাঠানো সম্ভব হয়। এ ছাড়া কোনো বিচ্যুতি না থাকায় স্বাভাবিক আলোর তুলনায় এর তীব্রতা অনেক বেশি।
অধিকাংশ লেজার পয়েন্টার লাল হয় কেন ?
একটি সাধারণ সেমিকন্ডাক্টর ডায়োড থেকে যে আলো নির্গত হয় তার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের 700-800 ন্যানোমিটারের মধ্যে থাকে, যার ফলে এটি কমলা থেকে লাল রঙের হয়।
গবেষকদের মতে সবুজ রঙের লেজার সবথেকে বেশি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে কারণ এই নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর প্রতি মানুষের চোখ সবথেকে বেশি সংবেদনশীল।
তাছাড়া এটি লাল রঙের লেজারের তুলনায় অনেকটা বেশি উজ্জ্বল এবং অনেক বেশি দূরত্বে পৌঁছাতে পারে।
একটি সবুজ লেজার আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য 600 ন্যানোমিটারের থেকে কম। এবং এত কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর ফোকাস বিম তৈরি করা বেশ জটিল।
সেমিকন্ডাক্টর ডায়োড থেকে লেজার আলো নির্গত হয় তরঙ্গ দৈর্ঘ্য প্রায় 800 ন্যানোমিটার এবং এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর রং লাল।
এই লাল রঙের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোকে যদি সবুজ রঙে রূপান্তরিত করতে হয় তাহলে নিওডিয়ামিয়াম স্ফটিকের এবং অন্যান্য কনভার্টার দরকার হয় যা বেশ ব্যয়বহুল ।
তাই লাল লেজার লাইটগুলি উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী ।