বাচ্চা থেকে বুড় আমরা সবাই হাজার হাজার ফুট উপর দিয়ে যাওয়া পাখির মত দেখতে বিমানের দিকে তাকিয়ে থাকি, বিমান বা প্লেনে চড়ার সক আমাদের সবার রয়েছে।
কিন্তু আপনি কি কখনও লক্ষ্য করেছেন যে বেশিরভাগ বিমান সাদা হয়?
বিমানের গায়ে থাকা বিভিন্ন লোগো এবং ডিজাইন অন্যান্য রঙের হলেও আসল বিমানের রং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাদা হয় । যদি আপনি যেটা আগে লক্ষ্য না করে থাকেন তাহলে হয়তো একটু অবাক লাগবে কিন্তু এটাই সত্যি।
কিন্তু সকলের জনপ্রিয় এই জিনিসটির রং সবসময় সাদা হয় কেন? বিভিন্ন দেশ বা কম্পানি তাদের নিজেদের মতন করে নিজেদের বিমান গুলিকে বিভিন্ন রং দেয় না কেন?
বিমানের সাদা হওয়ার পেছনে বেশ কতগুলো কারণ রয়েছে, চলুন আমরা সেই কারণগুলি সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নেওয়া যাক।
বিমানের বাহ্যিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
অন্যান্য যেকোনো রঙের তুলনায় সাদা রং সূর্যের থেকে আসা আলোকের প্রায় সম্পূর্ণটাই প্রতিফলিত করে। অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, অন্যান্য রং সূর্য থেকে আসা আলোর কিছুটা অংশ হলেও শোষণ করে।
অর্থাৎ সাদা রঙের জায়গায় যদি কোন রং দিয়ে বিমান রং করা হয় তাহলে সেই রং সূর্য থেকে আসা আলোর বেশ কিছুটা অংশ শোষণ করবে, আর এই আলো শোষণ করার অর্থ হলো তাপমাত্রা বৃদ্ধি হওয়া।
অন্যদিকে, সাদা রং, সেই সূর্যালোককে প্রতিফলিত করে এবং বিমান গেম সূর্য রশ্মি দ্বারা উত্তপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। এটি একটি ভাল জিনিস, যখন বিমানটি ফ্লাইটে থাকে শুধু তখনই নয়, এটি যখন রানওয়েতে দারিয়ে থাকে তখনো এই সাদা রং বিমানকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এছারা রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে মাটিতে ল্যান্ড করার পর এটি ঠান্ডা হতে কম সময় নেয়।
আরও জানুন :- লেন্স ফ্লেয়ার কি?
বিমানের গায়ের বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি সহজেই চোখে পরে
বিমানের গায়ে কোন রকম ফাটল, ডেন্ট বা অন্য কোন রকম ক্ষতি হলে এই সাদা রং এর কারনে সেটি সহজেই চোখে পরে। বিমানের গায়ে ফাটল ধরার ক্ষেত্রে সাদা রং এর চেয়ে ভালো আর কিছুই কাজ করে না, কারণ ফাটলটি প্রায় সবসময়ই সাদা রঙের থেকে গাঢ় হয়।
সাদা রং কোন রকম ক্ষয় ক্ষতি এবং তেল লিক হওয়ার দাগ কে সহজেই ফুটিয়া তোলে। এছাড়া সাদা রং ক্র্যাশ বা অন্য কোনও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে, বিশেষত রাতে সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
অন্যান্য কারণ
তবে প্লানের রং সাদা হওয়ার পেছনে যে সব সময় বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে তা নয়। এমন কিছু কারণ রয়েছে যা বৈজ্ঞানিক নয় কিন্তু সেগুলি কে উপেক্ষাও করা যায় না। সেই সমস্ত কারণ গুলি হল ইন
বিমান পেইন্টিং বেশ ব্যয়বহুল
আর্থিক দিক থেকে চিন্তা করলে, একটি বিমান রং করা একটি দেয়াল রং করার থেকে অনেকটাই আলাদা । যে কোন বিমান রং করার জন্য অর্থ, অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান এবং সময় এই সব দিক থেকে অনেক বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। আকার এর ওপর নির্ভর করে একটি এয়ারবাস পেইন্ট করতে দুই থেকে সাত দিন সময় লাগে। এছাড়া, বিমানের গায়ে পেইন্ট করারা পর এর সামগ্রিক ওজন আগের তুলনায় বেড়ে যায়। (সাধারণ ক্ষেত্রে রঙের কথা চিন্তা করার সময় আমরা এর ওজনের কথা খেয়াল করি না ) যা বিমান আকাশে ওড়ার খরচ কে বাড়িয়ে দেয়। এবং এয়ারলাইন কোম্পানি গুলি এই সমস্ত অতিরিক্ত খরচ কে সবসময় কমানোর চেষ্টা করে।
একটি এয়ারলাইন কোম্পানির শেষ লক্ষ্য হল খরচ যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা যায়। একটি রঙিন বিমান কেনার মানে হল যে ভবিষ্যতে এটি কে সাদা রঙ করতে হবে।
সাদা রং সহজে বিবর্ণ হয় না
বিমান যখন অনেক উপর দিয়ে পড়ে তখন সেটি সূর্যের অনেক ক্ষতিকারক রশ্মির সম্মুখীন হয়। এবং এই ক্ষতিকারক রশ্মি গুলো বিমানের রংকে অনেকটাই ফিকে করে দেয়। এরপর বিমানের থেকে হয়ে যাওয়া রং কি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বারবার রং করার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়। এবং বারংবার প্লেন রং করার অর্থ অতিরিক্ত ব্যয় যা এয়ারলাইন কম্পানি গুলি যেকোনো মূল্যে এড়াতে চায়।
অন্যদিকে, একটি সাদা রঙের বিমান, বাতাসে যথেষ্ট সময় কাটানোর পরেও উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা দেখায় না।
অবশেষে, যদি বিদ্যমান এর সাদা রঙের কোন সমস্যা না থাকে, তাহলে এটি কে ঠিক করার কোন প্রয়োজন নাই । তাছাড়া সাদা রঙের বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক এবং অর্থনৈতিক সুবিধা রয়েছে ।
যাইহোক, এ সমস্ত কারন সত্যও বেশ কিছু এয়ারলাইন কোম্পানির বহু রঙের বিমান আছে।
সুতরাং, পরের বার যদি আপনাকে কেউ জিজ্ঞাসা করে “ কেন সমস্ত বিমান সাদা হয়?” আপনি তার উত্তর জেনে গেলেন।