ছবি তোলার জন্য যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে যে ন্যূনতম জ্ঞান প্রয়োজন সেটা অনেকেই মনে করে না । আর তাছাড়া বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ ছবি তোলার জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করেন । স্মার্টফোনগুলো বর্তমানে এত উন্নত হয়ে উঠেছে যে ফটোগ্রাফারকে সাধারণত ছবির কোয়ালিটি সম্পর্কে কোনো রকম চিন্তা করতে হয়। স্মার্টফোনে থাকা ক্যামেরা এবং ক্যামেরা অ্যাপ নিজে থেকেই যেকোনো ছবিকে সুন্দর করে তুলতে পারে ।
কিন্তু যেহেতু ফটোগ্রাফির পেছনে থাকা বিজ্ঞান সম্পর্কে ফটোগ্রাফারের জ্ঞান সীমিত তাই এত অত্যাধুনিক যন্ত্র থাকা সত্বেও, কখনো কখনো ব্যতিক্রম চোখে পড়ে।
এই রকমই একটি ব্যতিক্রম হলো “লেন্স ফ্লেয়ার”। এটিকে ব্যতিক্রম না বলে যদি ক্যামেরা লেন্স এর বৈশিষ্ট্য বলা হয় তাহলে হয়তো সঠিক হবে।
সূর্যের দিকে ক্যামেরা তাক করে যদি কোন ছবি তোলা হয় তাহলে ম্যাচ ফ্লেয়ার দেখা যায়। ধরুন আপনি সুন্দর সবুজ গাছ এবং তার মধ্যে দিয়ে আসা সূর্যরশ্মির ছবি তুলছেন অথবা কোন পাখির ছবি তুলছে এই সমস্ত পরিস্থিতিতে ছবিতে লেন্স ফ্লেয়ার আসা সম্ভব।
লেন্স ফ্লেয়ার এর কথা মাথায় রেখে ঠিক করে কম্পোজিশন না করলে অনেক ক্ষেত্রে এই লেন্স ফ্লেয়ার এতটাই তীব্র হয় যা ছবির আসল বিষয়বস্তু কে নষ্ট করে দিতে পারে। কিন্তু সঠিক পরিমাণে লেন্স ফ্লেয়ার ছবিকে অন্য শৈল্পিক মাত্রা দেয়।
লেন্স ফ্লেয়ার কী এবং কীভাবে সেগুলিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা থাকলে তা সূর্যের দিকে তাকিয়ে তোলা যে কোন যে কোনও ছবিকে উন্নত করতে পারে এবং আপনার তোলা ফটোকে মাঝে মাঝে নাটকীয় ভাবে আলাদা করে তুলতে পারে৷
লেন্স ফ্লেয়ার কিভাবে তৈরি হয়?
লেন্স ফ্লেয়ার এমন একটি ঘটনা যা কোন উজ্জ্বল আলোর উৎসের কারণে তৈরি হয় এবং এর কারনে ছবির মধ্যে সারিবদ্ধ ভাবে কিছু বৃত্তাকার আকৃতি দেখা যায়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সূর্যের মধ্যে শুটিং করার জন্য এটি ঘটে, অনেক ক্ষেত্রে স্টুডিওগুলিতে উজ্জ্বল ব্যাকগ্রাউন্ড লাইট এর কারনে ও লেন্স ফ্লেয়ার দেখা যায়।
সাধারণত দু ধরনের লেন্স ফ্লেয়ার আমরা ছবির মধ্যে দেখতে পাই – চিত্র জুড়ে একটি হলুদ-সাদা কুয়াশা এবং দৃশ্যমান বৃত্তাকার জ্যামিতিক আকার, যেমন বহুভুজ এবং বৃত্ত।
কুয়াশার মত লেন্স ফ্লেয়ার (Haze) ছবির কন্ট্রাস্ট এবং স্যাচুরেশন কমিয়ে দেয়, এটিকে দেখে অনেক সময় ধোঁয়ার মত মনে হয়। এবং অনেক সময় এর কারণে ছবির মধ্যে থাকা অন্যান্য জিনিসকে স্পষ্ট ভাবে দেখা যায় না।
অন্য রকমের লেন্স ফ্লেয়ার যা ছবির মধ্যে বৃত্তাকার জ্যামিতিক আকার তৈরি করে তা আসলে লেন্সের সারফেস এর প্রতিফলন যা লেন্স আইরিসের আকারে নেয়। সাধারণত যেসব ক্যামেরায় জুম লেন্সে সংযুক্ত থাকে সেখানে এই ধরনের লেন্স ফ্লেয়ার দেখা যায়, কারণ সে ক্ষেত্রে বাইরে থেকে আসা আলো কে অনেক গুলি লেন্স অতিক্রম করতে হয়। অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন এই ধরনের লেন্স ফ্লেয়ার এর কারন।

আলোক উৎস থেকে আসা আলো লেন্সের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় তার যাত্রাপথের কোন (angle) পরিবর্তন করে ।
আলোক উৎসের রেস্পেক্টে ক্যামেরার অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে এই কনের তারতম্য ঘটে এবং তার সাথে সাথে তৈরি হওয়া লেন্স ফ্লেয়ার এর অবস্থান এবং দিক পরিবর্তন হয়। ফ্লেয়ারের আকারগুলি অ্যাপারচারের আকারের উপর নির্ভর করে।
লেন্স ফ্লেয়ার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমস্যার কারণ এবং এই সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ছবি তোলার সময় লেন্স হুড (লেন্স ফিল্টার) দিয়ে আরাল করলে এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
একই রকম ভাবে মানুষের চোখেও অভ্যন্তরীণ বিক্ষিপ্তকরণে ফ্লেয়ার উৎপন্ন হয়। যা খুব উজ্জ্বল কোন আলো বা অত্যন্ত উজ্জ্বল প্রতিফলিত পৃষ্ঠের দিকে তাকালে দেখা যায়। চোখের পালক কখনও কখনও ফ্লেয়ার এর মত এফেক্ট তৈরি করতে পারে, তবে তা আলোর বিচ্ছুরণের কারণেও হতে পারে ।