সময়ের সাথে সাথে আধুনিকীকরণ এবং ধারাবাহিক ভাবে গুণগত মানের উন্নতির জন্য নতুন উদ্ভাবনের ফলে কম্পিউটার সিস্টেমে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন হার্ডওয়্যার সংযোজিত হচ্ছে। বর্তমান কম্পিউটার গুলির হার্ডওয়ার পূর্বের তুলনায় অনেক বাশি ক্ষমতা সম্পন্ন এবং আকৃতিতেও অনেক ছোট।
কম্পিউটার সিস্টেমের physical part এর সংগ্রহ হল কম্পিউটার হার্ডওয়্যার । কম্পিউটার হার্ডওয়ার কে কম্পিউটারের দেহ বললে মন প্রকার ভুল হবে না।
কম্পিউটারের কয়টি অংশ ও কি কি
একটি কম্পিউটার সিস্টেম দুটি প্রধান উপাদান নিয়ে গঠিত: হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার
হার্ডওয়্যার কি ? | কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি ?
কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ সমূহকে একত্রে কম্পিউটার হার্ডওয়ার বলা হয়। সাধারণত কম্পিউটার হার্ডওয়ার কি আমরা দেখতে পারি এবং স্পর্শ করতে পারি। কিবোর্ড, মাউস, মাইক্রোপ্রসেসর, মাদারবোর্, ডিস্ক ড্রাইভ, মনিটর, প্রিন্টার ইত্যাদি হলো কম্পিউটার হার্ডওয়ার এর উদাহরণ।
কম্পিউটার হার্ডওয়ার এর শ্রেণীবিভাগ
কম্পিউটার এর তৈরীতে যে সমস্ত বিভিন্ন ধরণের হার্ডওয়্যার ব্যবহৃত হয়। সে গুলি প্রধানত দুই প্রকার হয় । যেমন-
ইন্টারনাল হার্ডওয়্যার (Internal Hardware)
- Motherboard
- Central Processing Unit
- Random Access Memory
- Power Supply Unit
- Graphics Processing Unit
- Video Card
- Hard Drive
- Solid-State Drive
- Optical Drive
- Card Reader
হার্ডওয়্যার এর কাজ কি?
হার্ডওয়্যার (Hardware) বলতে বোঝায় কম্পিউটার এর যে সব অংশ বা সরঞ্জাম গুলিকে আমরা হাত দিয়ে স্পর্শ করতে পারি।
যখন কোন computer ব্যবহার কারি কম্পিউটার দিয়ে কোন কাজ করতে চায়। তখন সে কম্পিউটার কে কিছু নির্দেশ দেয়। এবং কম্পিউটার সেই কাজটি হার্ডওয়্যার এর মাধ্যমে সম্পন্ন করে। যেমন input, processing, output, secondary storage ইত্যাদি।
হার্ডওয়্যার এর গুরুত্ব
সফটওয়্যার আসলে কোন কাজ করার নির্দেশ মাত্র, কিন্তু সেই কাজটি কে বাস্তবায়িত করার জন্য হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন। হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার কে ধারণ করে এবং তার দেওয়ার নির্দেশ কে বাস্তবায়িত করে।
যদি আমরা হার্ডওয়্যার ছাড়া কোন কম্পিউটার কে কল্পনা করতে চাই তাহলে সেটি এই রকম হবে। ধরুন যদি এমন হয়, কোন ব্যক্তির মন রয়েছে আত্মা রয়েছে কিন্তু তার শরীর টাই নাই অর্থাৎ হার্ট, কিডনি, ফুসফুস, হাত-পা চোখ-নাক-কান।
এইরকম কোন ব্যক্তির অস্তিত্ব যদি থেকে থাকে তাহলে সে হয়তো ভাবতে বা চিন্তা করতে পারবে কিন্তু সেই চিন্তার উপর ভিত্তি করে কোন কাজই সে করতে পারবে না। এধরনের ব্যাক্তিকে আসলে কোন মানুষ বা কোন জীব বলা যায় কিনা তা জানা নেই।
কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার গুলোও আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের মত। শরীরের কোন একটা অংশ নাই মানে , আমরা সেই অংশের সাথে যুক্ত কাজ করতে পারবনা।
কোন কম্পিউটারে যদি কোন ইনপুট ডিভাইস (যেমন কীবোর্ড, মাউস ইত্যাদি) না থাকে তবে আমরা সেই কম্পিউটারকে কোনরকম কিন্তু দিতে পারবো না। একইরকম ভাবে যদি তাতে আপত্তি না থাকে তবে কোনরকম আউটপুট কম্পিউটার (যেমন মনিটর, সাউন্ড সিস্টেম) থেকে আমরা খেতে পারব না।
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কত প্রকার ও কি কি ?
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার গুলিকে প্রধানত পাঁচ টি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা যায়
- Input Hardware (ইনপুট হার্ডওয়্যার)
- Processing Hardware (প্রসেসিং হার্ডওয়্যার)
- Output Hardware (আউটপুট হার্ডওয়্যার)
- Storage Hardware ( স্টোরেজ হার্ডওয়্যার)
- Communication Hardware ( কমিউনিকেশন হার্ডওয়্যার)
1. Input Hardware (ইনপুট হার্ডওয়্যার)
Raw data ইনপুট করতে ব্যবহৃত উপাদানগুলি Input Device বা Input Hardware বলে। এই ইনপুট ডিভাইস গুলিকে অধীনে ভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। যেমন text, images এবং audiovisual recording এর মতো data input device এর মত ইনপুট হার্ডওয়্যার রয়েছে। ইনপুট ডিভাইস গুলি কম্পিউটারের মধ্যে ফাইল স্থানান্তরে ও সহায়তা করে।
কীবোর্ড সম্ভবত সর্বাধিক ব্যবহৃত ইনপুট ডিভাইস। নীচে কেবলমাত্র কিছু অন্যান্য ধরণের ইনপুট ডিভাইস রয়েছে।
Input এর ধরন | ইনপুট ডিভাইস |
Pointing Device | Mouse, touch-pad, touchscreen, multi-touch screen, pen input, motion sensor and fingerprint scanner. |
Game Controller | Joystick |
Audio Input Device | Microphone and midi keyboard. |
Bluetooth Peripheral | Keyboard, mouse, headset, printer. |
Visual and Imaging Device | Webcam, digital camera and barcode reader. |
Network Device | Ethernet hardware and Bluetooth/wireless hardware. |
2. Processing Hardware (প্রসেসিং হার্ডওয়্যার)
প্রসেসিং হ’ল একটি কম্পিউটারের মূল কাজ। এটি এমন পর্যায়ে যেখানে কাঁচা তথ্য তথ্যে রূপান্তরিত হয়। একবার ডেটা প্রক্রিয়া করা হয়ে গেলে, এটি দরকারী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তথ্যগুলিতে ডেটা ম্যানিপুলেট করে এমন উপাদানগুলি প্রক্রিয়াজাতকরণের অধীনে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।
এই বিভাগে মাইক্রোপ্রসেসর প্রধান ডিভাইস। এটি এর ক্রিয়াকলাপের সময় প্রাথমিক স্মৃতিতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। প্রসেসিং সময়কালে ডেটা প্রসেসর ক্যাশে এবং প্রাথমিক মেমরিতে অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয়।
Processor বা CPU টি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে বিভক্ত হয়, যা এর কার্য সম্পাদন করতে একত্রে কাজ করে। ইউনিটগুলি হ’ল:
নিয়ন্ত্রণ ইউনিট: এটি ডেটা ম্যানিপুলেশনের ক্ষেত্রে প্রসেসর এবং অন্যান্য উপাদানগুলির ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা এবং তদারক করে।
লজিক ইউনিট: ALU সমস্ত পাটিগণিত এবং লজিক অপারেশনের জন্য যেমন সংযোজন, গুণ, বিয়োগ, বিভাগ এবং তুলনা লজিক অপারেশনের জন্য দায়ী।
রেজিস্টার এবং ক্যাশে: প্রসেসরের অভ্যন্তরে এগুলি স্টোরেজ লোকেশন যা প্রসেসিংয়ের সময় প্রাসঙ্গিক ডেটাগুলি কাছাকাছি রেখে কন্ট্রোল ইউনিটের নির্দেশকে সাড়া দেয়।
Register Memory কি ও এর কাজ কি?
3. Output Hardware (আউটপুট হার্ডওয়্যার)
যে সমস্ত হার্ডওয়্যার এর মাধ্যমে ডেটা এবং তথ্য, প্রচার ও প্রদর্শন করা হয় তাকে Output Device বলা হয়।
আউটপুট হল একটি চক্রের সমাপ্তি যা ডেটা ইনপুট এবং প্রসেসিংয়ের দিয়ে শুরু হয়।
Output Device || আউটপুট ডিভাইস কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
আউটপুট ডিভাইস এর কাজ
কম্পিউটার তার কাজ ( ডেটা প্রসেসিং ) করার পর, কোন না কোন প্রকারে সেই ডাটা(ফলাফল) টি user কে জানাবে অথবা সেটিকে সঞ্ছয় করে রাখে ভবিষ্যতে ব্যবহার এর জন্য। এই ডাটা প্রকাশ করা বা সঞ্ছয় করাই আউটপুট ডিভাইস এর কাজ ।
4. Storage Hardware ( স্টোরেজ হার্ডওয়্যার)
সংক্ষেপে Storage বলতে, যেখানে তথ্য (যেমন ওয়ার্ড ডকুমেন্ট, ফটো, মুভি ক্লিপস, প্রোগ্রাম ইত্যাদি) সঞ্চিত থাকে। একটি কম্পিউটারে উইন্ডোজ 7 বা MAC OS এর মতো পুরো অপারেটিং সিস্টেমটিও অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ ডিভাইসে সঞ্চিত থাকে। স্টোরেজ nonvolatile, এর অর্থ হ’ল host device (উদাহরণস্বরূপ একটি কম্পিউটার) বন্ধ করা হলেও পরবর্তী সময় যখন ডিভাইসটি চালু করা হয় তখন সহজেই আগের সেভ করা ডাটা ব্যবহার যোগ্য অবস্থায় পাওয়া যায়।
5. Communication Hardware ( কমিউনিকেশন হার্ডওয়্যার)
কম্পিউটার যে শুধু ডাটা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ফলাফল প্রদান করে তা নয়। এর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কম্পিউটার অথবা অন্য কোন ডিজিটাল ডিভাইস এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়ার ব্যবহার করে ইনফরমেশন আদান প্রদান করা হয় এই সকল হার কে বলা হয় কমিউনিকেশন হার্ডওয়ার বলা হয়।
অর্থাৎ এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে অথবা এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে যোগাযোগ বা ডাটা আদান-প্রদান, শেয়ার ইত্যাদির জন্য যে সমস্ত ডিভাইস ব্যবহৃত হয় সেগুলিকে বলা হয় কমিউনিকেশন হার্ডওয়ার।
কমিউনিকেশন হার্ডওয়ার এর কিছু উদাহরন হল –
- মডেম (Modem)
- হাব (Hub)
- সুইচ (Switch)
- রিপিটার (Repeater)
- ব্রিজ (Bridge)
- রাউটার (Router)
- গেটওয়ে (Getway)
- নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড (Network Interface Card)
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর পার্থক্য
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার হল যান্ত্রিক অংশ সমুহ যা আপনি physically স্পর্শ করতে পারেন। অন্যদিকে কম্পিউটার সফ্টওয়্যার হল কিছু নির্দেশ যা আপনি ছুঁতে পারেন না।
সফ্টওয়্যার একটি কম্পিউটারের নির্দিষ্ট ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনের জন্য নির্দেশাবলীর একটি সেট। কম্পিউটার সিস্টেমটি কাজ করার জন্য আপনার দুটি হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার দরকার।
হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর মধ্যে সম্পর্ক
হার্ডওয়্যার
- কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যার উপস্থিতি আছে তাকে হার্ডওয়্যার বলা হয়। উদাহরণ: মনিটর, হার্ডডিস্ক, প্রসেসর, র্যাম, রম ইত্যাদি।
- দেখা যায় এবং স্পর্শ করা যায়।
- হার্ডওয়্যার কপি করা জায়না
- হার্ডওয়্যার তৈরি করতে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়তে হয়।
- দীর্ঘদিন ব্যবহারে হার্ডওয়্যার নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- ভাইরাস হার্ডওয়্যারের ক্ষতি করতে পারে না।
সফটওয়্যার
- কম্পিউটারের ল্যাংগুয়েজ দিয়ে তৈরি নির্দেশাবলি বা প্রোগ্রামিং কোডসমূকে সফটওয়্যার বলা হয়।
- স্পর্শ করা যায় না।
- সফটওয়্যার ছাড়া হার্ডওয়্যার অর্থহীন।
- সফটওয়্যার হার্ডওয়্যারকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- কম্পিউটার ভাইরাস সফটওয়্যারের ক্ষতি করতে পারে।
- একই সফটওয়্যার কপি করে লক্ষ লক্ষ লোক ব্যবহার করতে পারে।